জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাস - কৃষ্ণনগর, জয়রামবাটি, চন্দননগর
ওঁ দূং শ্রীশ্রীমজ্জগদ্ধাত্রীদুর্গায়ৈ নমঃ
গায়ত্রী: মহাদেব্যৈ বিদ্মহে সিংহবাহিন্যৈ ধীমহি। তন্নো দেবী প্রচোদয়াৎ।
গায়ত্রী: মহাদেব্যৈ বিদ্মহে সিংহবাহিন্যৈ ধীমহি। তন্নো দেবী প্রচোদয়াৎ।
তখন দেবগণ ইন্দ্রকে বালিকার পরিচয় জানবার নিমিত্ত প্রেরণ করলেন। ইন্দ্র অহংকার-প্রমত্ত হয়ে বালিকার কাছে আসেননি, এসেছিলেন জিজ্ঞাসু হয়ে। তাই ব্রহ্মরূপী দেবী পার্বতীতার সম্মুখ হতে তিরোহিত হলেন। বরং তার সম্মুখের আকাশে দিব্য স্ত্রীমূর্তিতে আবির্ভূত হলেন হৈমবতী উমা পার্বতী। উমা ব্রহ্মের স্বরূপ ব্যাখ্যা করে ইন্দ্রের জ্ঞানপিপাসা নিবৃত্ত করলেন।
নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজত্বকাল থেকেই বঙ্গদেশে জগদ্ধাত্রী পূজার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। বরিশালে প্রাপ্ত খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকের জগদ্ধাত্রী মূর্তি, খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে শূলপাণি রচিত গ্রন্থে জগদ্ধাত্রী পূজার উল্লেখ ও কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বকালের পূর্বে নদিয়ার বিভিন্ন মন্দির-ভাস্কর্যে দেবী জগদ্ধাত্রীর উপস্থিতি থেকে প্রমাণিত হয়, বঙ্গদেশে জগদ্ধাত্রী আরাধনা কোনও অর্বাচীন প্রথা নয়।
জগদ্ধাত্রী পূজার নিয়মটি একটু স্বতন্ত্র। দুটি প্রথায় এই পূজা হয়ে থাকে। কেউ কেউ সপ্তমী থেকে নবমী অবধি দুর্গাপূজার ধাঁচে জগদ্ধাত্রী পূজা করে থাকেন। আবার কেউ কেউ নবমীর দিনই তিন বার পূজার আয়োজন করে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পূজা সম্পন্ন করেন। এই পূজার অনেক প্রথাই দুর্গাপূজার অনুরূপ।
• কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো :
• কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো :
নদিয়া জেলার সদর কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। কিংবদন্তী অনুসারে নবাব আলিবর্দির রাজত্বকালে মহাবদজঙ্গ রাজার নিকট থেকে বারো লক্ষ টাকা নজরানা দাবি করেন। নজরানা দিতে অপারগ হলে তিনি রাজাকে বন্দী করে মুর্শিদাবাদে (মতান্তরে মুঙ্গেরে) নিয়ে যান। মুক্তির পর নদীপথে কৃষ্ণনগরে প্রত্যাবর্তনের সময় ঘাটে বিজয়া দশমীর বিসর্জনের বাজনা শুনে তিনি বুঝতে পারেন সেই বছর দুর্গাপূজার কাল উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। দুর্গাপূজার আয়োজন করতে না পেরে রাজা অত্যন্ত দুঃখিত হন। সেই রাতে দুর্গা জগদ্ধাত্রীর রূপে রাজাকে পরবর্তী শুক্লানবমী তিথিতে জগদ্ধাত্রী দুর্গার পূজা করার আদেশ দেন।অন্য এক মতে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা ১৭৬৬ সালে।কেউ কেউ আবার কৃষ্ণচন্দ্রের প্রপৌত্র গিরিশচন্দ্রকে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী পূজার প্রবর্তক মনে করেন। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির দরজা জগদ্ধাত্রী পূজার সময় আজও খোলা থাকে। পূজা পুরনো প্রথা মেনে হয় শুধুমাত্র নবমী তিথিতে।
১৭৭২ সালে রাজবাড়ির দেখাদেখি কৃষ্ণনগরের চাষাপাড়ায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রজারা জগদ্ধাত্রী পূজা শুরু করেন। বুড়িমার পূজা নামে পরিচিত এই পূজা শুরু হয়েছিল ঘটে ও পটে। প্রথম দিকে স্থানীয় গোয়ালারা দুধ বিক্রি করে এই পূজার আয়োজন করতেন। ১৭৯০ সাল নাগাদ গোবিন্দ ঘোষ ঘটপটের পরিবর্তে প্রতিমায় জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন। এখানকার প্রতিমার বৈশিষ্ট্য হল প্রায় সাড়ে সাতশো ভরি সোনায় গয়নায় দেবীপ্রতিমার অলংকারসজ্জা। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দাদের মতে এই দেবী অত্যন্ত জাগ্রতা; তার নিকট সকল মনোষ্কামনাই পূর্ণ হয়।
এছাড়া কৃষ্ণনগরের উল্লেখযোগ্য বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পূজাগুলি হল প্রীতিসম্মেলনী, বালকেশ্বরী, মালোপাড়া, হাতারপাড়া, উকিলপাড়া, ষষ্ঠীতলা, বউবাজার, নেদেরপাড়া, বাঘাডাঙা, পাত্রমার্কেট, কৃষ্ণনগর স্টেশন চত্বর, বেজিখালি, চকেরপাড়া, বাগদিপাড়া, মাঝেরপাড়া, ঘূর্ণি, হরিজনপল্লি, তাঁতিপাড়া, কালীনগর ইত্যাদি। বর্তমানে কৃষ্ণনগরে বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পূজা হয় দুই শতেরও বেশি।
• চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা :
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার প্রবর্তক ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। জানা যায়, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ ইন্দ্রনারায়ণ ছিলেন চন্দননগরের ফরাসি সরকারের দেওয়ান। প্রায় আড়াইশো বছর আগে, কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পূজা দেখে মুগ্ধ হয়ে ইন্দ্রনারায়ণ চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টির নিচুপাটিতে জগদ্ধাত্রী পূজার প্রচলন করেন। লক্ষ্মীগঞ্জ প্রতিষ্ঠার কিছুকাল পরেই এই পূজার সূচনা। এই পূজা চন্দননগরে আদি পূজা নামে পরিচিত। এখনও পর্যন্ত পুরুষানুক্রমে দেওয়ান চৌধুরীদের উত্তরপুরুষের নামে পূজার সংকল্প হয়। এখানকার প্রতিমার বৈশিষ্ট্য হল সনাতনরীতির প্রতিমায় সাদা সিংহ এবং বিপরীতমুখী অবস্থানে হাতি। শোনা যায়, বিসর্জনের সময় আদি প্রতিমা জলে পড়লেই শুশুক বা সাপের দেখা পাওয়া যায়। স্থানীয় বিশ্বাসে এই দেবী অত্যন্ত জাগ্রতা।
লক্ষ্মীগঞ্জ কাপড়েপট্টির জগদ্ধাত্রী পূজা চন্দননগরে দ্বিতীয় প্রাচীনতম পূজা। ১৭৬৮ সালে চাউলপট্টির চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় কাপড় ব্যবসায়ী শ্রীধর বন্দ্যোপাধ্যায় (মতান্তরে শশধর) রীতিমতো চাঁদা তুলে এই পূজা প্রবর্তন করেন। এই অঞ্চলের অপর দুটি পূজা হল লক্ষ্মীগঞ্জ চৌমাথা (স্থাপিত ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দ) ও লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের (স্থাপিত ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ) পূজা। উত্তর চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টি, কাপড়েপট্টি, চৌমাথা ও বাজার – এই চার পূজাতেই সিংহের রং সাদা।
উত্তর চন্দননগরের অন্যান্য বড়ো জগদ্ধাত্রী পূজাগুলি হল চন্দননগর বাগবাজার (স্থাপিত ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দ), খলিসানী কলপুকুরধার, বউবাজার শীতলাতলা, খলিসানী বউবাজার, বাগবাজার চৌমাথা, বিদ্যালঙ্কার, পালপাড়া, বিবিরহাট উত্তরাঞ্চল, বিবিরহাট চড়কতলা তেমাথা, হরিদ্রাডাঙা, হেলাপুকুরধার, নাড়ুয়া, কাঁটাপুকুর, কাঁটাপুকুর চৌমাথা, বোড়ো কালীতলা, বোড়ো পঞ্চাননতলা, বোড়ো চাঁপাতলা, বোড়ো দিঘির ধার, বোড়ো তালডাঙা ইত্যাদি।
দক্ষিণ চন্দননগরের বিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পূজাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য মানকুণ্ডু সার্বজনীন, মানকুণ্ডু নতুনপাড়া, নিয়োগী বাগান, সার্কাস মাঠ, তেমাথা, অম্বিকা অ্যাথলেটিক ক্লাব, মরান রোড, গোন্দলপাড়া মনসাতলা, সাতঘাটা, গোন্দলপাড়া চারমন্দিরতলা, বেশোহাটা, লিচুতলা হাজিনগর, হাটখোলা দৈবকপাড়া, মনসাতলা, ভুবনেশ্বরীতলা, নোনাটোলা, বড়বাজার, পাদ্রিপাড়া, লালবাগান, ড্যুপ্লেক্সপট্টি, শ্রমিকপল্লি, সুভাষ জাগরণ সংঘ তেমাথা, অরবিন্দ সংঘ, বারাসত দক্ষিণ, বারাসত গেট। দক্ষিণ চন্দননগরের হালদারপাড়ার আদিপুজো অশ্বত্থতলার বুড়িমার পূজা নামে পরিচিত। এই পূজা লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টি ও কাপড়েপট্টির পূজার সমসাময়িক বলে মনে করা হয়। চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটির অনুমোদিত তিনশের অধিক পূজা হয় ।
চন্দননগরের আলোকসজ্জা , দেবীমূর্তি ও শোভাযাত্রা বিশ্বখ্যাত। প্রতি বছর লটারির মাধ্যমে শোভাযাত্রার জন্য 75-80টি পূজা কমিটিকে বেছে নেওয়া হয়।
দক্ষিণ চন্দননগরের বিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পূজাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য মানকুণ্ডু সার্বজনীন, মানকুণ্ডু নতুনপাড়া, নিয়োগী বাগান, সার্কাস মাঠ, তেমাথা, অম্বিকা অ্যাথলেটিক ক্লাব, মরান রোড, গোন্দলপাড়া মনসাতলা, সাতঘাটা, গোন্দলপাড়া চারমন্দিরতলা, বেশোহাটা, লিচুতলা হাজিনগর, হাটখোলা দৈবকপাড়া, মনসাতলা, ভুবনেশ্বরীতলা, নোনাটোলা, বড়বাজার, পাদ্রিপাড়া, লালবাগান, ড্যুপ্লেক্সপট্টি, শ্রমিকপল্লি, সুভাষ জাগরণ সংঘ তেমাথা, অরবিন্দ সংঘ, বারাসত দক্ষিণ, বারাসত গেট। দক্ষিণ চন্দননগরের হালদারপাড়ার আদিপুজো অশ্বত্থতলার বুড়িমার পূজা নামে পরিচিত। এই পূজা লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টি ও কাপড়েপট্টির পূজার সমসাময়িক বলে মনে করা হয়। চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটির অনুমোদিত তিনশের অধিক পূজা হয় ।
চন্দননগরের আলোকসজ্জা , দেবীমূর্তি ও শোভাযাত্রা বিশ্বখ্যাত। প্রতি বছর লটারির মাধ্যমে শোভাযাত্রার জন্য 75-80টি পূজা কমিটিকে বেছে নেওয়া হয়।
• বাঁকুড়া জেলার জয়রামবাটী গ্রামের জগদ্ধাত্রী পুজো :
বাঁকুড়া জেলার জয়রামবাটী গ্রামে রামকৃষ্ণ পরমহংসের সহধর্মিণী সারদা দেবীর জন্মভিটা র জগদ্ধাত্রী পূজা বিশেষ প্রসিদ্ধ। পূজা উপলক্ষে জয়রামবাটীতে প্রচুর ভক্তসমাগম হয়। সারদা দেবীর পৈতৃক বাড়িতে এই পূজার আয়োজন করে রামকৃষ্ণ মিশন। ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে (১২৮৪ বঙ্গাব্দ) সারদা দেবীর পিতৃগৃহে প্রথম জগদ্ধাত্রী পূজার আয়োজন করেছিলেন তার জননী শ্যামাসুন্দরী দেবী। কিংবদন্তি অনুসারে, প্রতি বছর শ্যামাসুন্দরী দেবী প্রতিবেশী নব মুখুয্যের বাড়ির কালীপূজা উপলক্ষে নৈবেদ্যের চাল পাঠাতেন। ওইবছর কোনো বিবাদের কারণে নব মুখুজ্যে চাল নিতে অস্বীকার করেন। নৈবেদ্যদানে অসমর্থ হয়ে শ্যামাসুন্দরী দেবী অত্যন্ত মর্মাহত হন। সেই রাতেই তিনি জগদ্ধাত্রীকে স্বপ্নে দেখেন এবং তার স্বপ্নাদেশে ওই চালে জগদ্ধাত্রী পূজার আয়োজন করেন।
প্রথম বছর বিসর্জনের দিন বৃহস্পতিবার ছিল। তাই সারদা দেবী লক্ষ্মীবারে বিসর্জনে আপত্তি করেছিলেন। পরদিন সংক্রান্তি ও তার পরদিন মাস পয়লা থাকায় ওই দুই দিনও বিসর্জন দেওয়া যায়নি। বিসর্জন হয় চতুর্থ দিনে। আরও কথিত আছে যে, পরের বছর সারদা দেবী জগদ্ধাত্রী পূজা বন্ধ করে দিতে চাইলে দেবী জগদ্ধাত্রী তাকে স্বপ্নাদেশে পূজা বন্ধ করা থেকে নিরস্ত করেন। এরপর প্রথম চার বছর পূজা হয়েছিল শ্যামাসুন্দরী দেবীর নামে; দ্বিতীয় চার বছর সারদা দেবীর নামে এবং তৃতীয় চার বছর তার কাকা নীলমাধব মুখোপাধ্যায়ের নামে। বারো বছর পর সারদা দেবী পুনরায় পূজা বন্ধ করবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শোনা যায়, এই বারও জগদ্ধাত্রীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি নিরস্ত হন।
জীবদ্দশায় প্রতি বছরই জগদ্ধাত্রী পূজায় উপস্থিত থাকতেন সারদা দেবী। পূজা পরিচালনার জন্য তিনি সাড়ে দশ বিঘার কিছু বেশি জমি দেবোত্তর সম্পত্তিরূপে দিয়ে যান। ১৯১৯ সালে সারদা দেবী এই পূজায় শেষবার উপস্থিত ছিলেন। পরের বছর তিনি প্রয়াত হন।
প্রথম পূজার ঐতিহ্য অনুযায়ী আজও শুক্লা নবমীতে মূল পূজার পরও দুই দিন প্রতিমা রেখে দিয়ে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। দুর্গাপূজার মতোই পূজার সঙ্কল্প হয় সারদা দেবীর নামে। জগদ্ধাত্রীর প্রতিমার পাশে জয়া-বিজয়া ও নারদ মুনির প্রতিমা থাকে। নবমীতে ষোড়শোপচারে পূজা, তিন বার চণ্ডীপাঠ ও মাতৃমন্দিরে দরিদ্রনারায়ণ সেবা হয়। দশমীর দিন দশোপচারে পূজা হয়। এই দিন সন্ধ্যারতির পর যাত্রাগানের আসর বসে। একাদশীর দিনও দশোপচারে পূজা ও বিসর্জনকৃত্য সম্পন্ন হয়। এই দিন ধুনুচি নৃত্য, কর্পূরারতি, কনকাঞ্জলি প্রদান প্রভৃতিও অনুষ্ঠিত হয়। ধুনুচি নাচের পর বাদ্যঘণ্টা ও শোভাযাত্রা সহকারে মায়ের দিঘিতে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। প্রতিমা নিরঞ্জনে আশ্রমবাসী, অতিথি এবং গ্রামবাসী সকলে অংশ নেন। পূজা উপলক্ষে আশ্রমপ্রাঙ্গনে মেলাও বসে।
জীবদ্দশায় প্রতি বছরই জগদ্ধাত্রী পূজায় উপস্থিত থাকতেন সারদা দেবী। পূজা পরিচালনার জন্য তিনি সাড়ে দশ বিঘার কিছু বেশি জমি দেবোত্তর সম্পত্তিরূপে দিয়ে যান। ১৯১৯ সালে সারদা দেবী এই পূজায় শেষবার উপস্থিত ছিলেন। পরের বছর তিনি প্রয়াত হন।
প্রথম পূজার ঐতিহ্য অনুযায়ী আজও শুক্লা নবমীতে মূল পূজার পরও দুই দিন প্রতিমা রেখে দিয়ে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। দুর্গাপূজার মতোই পূজার সঙ্কল্প হয় সারদা দেবীর নামে। জগদ্ধাত্রীর প্রতিমার পাশে জয়া-বিজয়া ও নারদ মুনির প্রতিমা থাকে। নবমীতে ষোড়শোপচারে পূজা, তিন বার চণ্ডীপাঠ ও মাতৃমন্দিরে দরিদ্রনারায়ণ সেবা হয়। দশমীর দিন দশোপচারে পূজা হয়। এই দিন সন্ধ্যারতির পর যাত্রাগানের আসর বসে। একাদশীর দিনও দশোপচারে পূজা ও বিসর্জনকৃত্য সম্পন্ন হয়। এই দিন ধুনুচি নৃত্য, কর্পূরারতি, কনকাঞ্জলি প্রদান প্রভৃতিও অনুষ্ঠিত হয়। ধুনুচি নাচের পর বাদ্যঘণ্টা ও শোভাযাত্রা সহকারে মায়ের দিঘিতে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। প্রতিমা নিরঞ্জনে আশ্রমবাসী, অতিথি এবং গ্রামবাসী সকলে অংশ নেন। পূজা উপলক্ষে আশ্রমপ্রাঙ্গনে মেলাও বসে।