আদ্যাপীঠ মন্দিরের ইতিহাস এবং মহাফলপ্রদ আদ্যাস্তোত্র
আদ্যাপীঠ
দক্ষিণেশ্বর লাগোয়া এই কালীক্ষেত্র নিয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস। চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় কবিরাজি পড়তে এসেছেন অন্নদা ঠাকুর। কবিরাজি পাশ করার প্র্যাকটিস করবেন এমন ঠিক করেছেন। এমন সময় রামকৃষ্ণদেব তাঁকে বলেছিলেন তোমার কবিরাজি ব্যবসা হবে না। ঠাকুর অন্নদাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ইডেন গার্ডেন্সের ঝিলে আদ্যা মা পড়ে আছেন। ওখান থেকে মাকে উঠিয়ে নিয়ে এসো।
অন্নদা ঠাকুর ঝিলে খোঁজাখুঁজি করতে ১৮ ইঞ্চি আদ্যা মায়ের কষ্টিপাথরের মূর্তি পান। সেদিন ছিল রামনবমী তিথি। রাতে মা তাঁকে দেখা দিয়ে বলেন, অন্নদা কাল বিজয়া দশমী। তুমি আমায় গঙ্গায় বিসর্জন দিও। এই কথা শুনে অন্নদা আঁতকে উঠে বলেন, আমি কি পুজোপাঠ করিনি বলে তিনি রাগ করে চলে যাচ্ছেন ? তখন মা বলেন, না তা নয়। আমি শুধু শাস্ত্র বিহিত মতে পুজো পেতে চাই তা নয়। মা খাও, মা পড়ো - এমন সহজ সরল প্রাণের ভাষায় যে ভক্ত নিজের ভোগ্যবস্তু এবং ব্যবহার্য বস্তু আমাকে নিবেদন করেন, সেটাই আমার পুজো। যদি কোনও ভক্ত আমার সামনে আদ্যাস্তোত্র পাঠ করে তাহলে আমি বিশেষ আনন্দিত হই। এরপর মা আদ্যাস্তোস্ত্র বলেন, আর অন্নদা ঠাকুর লিখে যান। সেই স্ত্রোত্রই এখন আদ্যাপীঠে পাঠ হয়।
এই ঘটনার চার বছর পর ১৯১৮ সালে ঝুলন পূর্ণিমার রাতে রামকৃষ্ণদেব অন্নদা ঠাকুরকে হৃষিকেষ যেতে বলেন। সেখানে মন্দির তৈরির আদেশ দেন তিনি। রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন সৃষ্টির পর পৃথিবীর বুকে এমন মন্দির হতে চলেছে যেখানে ঈশ্বরের প্রকট আবির্ভাব ঘটবে। তার মাহাত্ম্য এতটাই হবে যে মন্দির স্পর্শ করলেই ভক্তদের উদ্ধার মিলবে।
রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিষ্য অন্নদা ঠাকুরের হাত ধরেই দক্ষিণেশ্বরের অদূরেই তৈরি হয় এই আদ্যাপীঠ। কোনও শাক্ত পীঠ নয়। আদ্যাশক্তি মহামায়ার বিগ্রহেই ফুল-চন্দন পড়ে নিয়মিত। ভোগও হয়। তবে অন্য দিনের থেকে একটু আলাদা আয়োজন কালীপুজোর দিন। সেদিন মহাপুজোর আয়োজন হয় আদ্যা মন্দিরে। কার্তিক অমাবস্যার আঁধার কাটিয়ে, দীপাবলির আলোয় সেজে ওঠে গোটা আদ্যাপীঠ। আদ্যাশক্তি মহামায়া। দেবীর আরাধনায় তো নিজের জীবন উত্সর্গ করে ছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দিরে ভবতারিণীর সংসারেই, গোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছিলেন কামারপুকুরের গদাধর চট্টোপাধ্যায়।
নির্দেশ ছিল, বারো বছরের মধ্যে মন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ হলেই মন্দিরে সাধারণের প্রবেশ অবাধ থাকবে। কিন্তু তা হয়নি। তাই নাট মন্দির থেকেই দর্শন করতে হয় দেবীকে। শীর্ষে রাধাকৃষ্ণ, তারপর আদ্যাশক্তি মহামায়া এবং দেবীর নীচে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। এভাবেই সাজানো মূল মন্দিরের কক্ষ।
ভোগেও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রাধাকৃষ্ণের জন্য সাড়ে বত্রিশ সের চালের রান্না হয়। দেবীর জন্য সাড়ে বাইশ সের চাল বরাদ্দ। এবং রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জন্য সাড়ে বারো সের চালের রান্না হয়। এ ব্যবস্থা প্রতিদিনের। মূল মন্দিরের নির্মাণেও বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। মন্দিরের চূড়ায় সর্ব ধর্মের প্রতীক ব্যবহৃত। আছে হিন্দু ধর্মের ত্রিশুল, বৌদ্ধ ধর্মের পাখা, খ্রীষ্ট ধর্মের ক্রুশ এবং ইসলাম ধর্মের চাঁদ-তারা। জনশ্রুতি, এমন ভাবনা স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী। দেবী যে সর্বজনীন।
আদ্যা মা -- মায়ের মধুর নামে রয়েছে শক্তি৷ সেই শক্তিতেই জীবনের সমস্ত বিপর্যয় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়৷ প্রচলিত আছে প্রতিদিন যদি আদ্যাস্তোস্ত্র পাঠ করা যায় তবেই জীবনের বিভিন্ন সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব৷ কঠিন ব্যাধি থেকে জীবনের বাধা বিপত্তি, আর্থিক অনটন থেকে সুখের সময়ের বাধা৷
আদ্যাস্তোত্রম
ওঁ নমঃ আদ্যায়ৈ
শৃণু বৎস্য প্রবক্ষ্যামি আদ্যাস্তোত্রং মহাফলম্।
যঃ পঠেৎ সততং ভক্ত্যা স এব নিষ্ণুবল্লতঃ।।
মৃত্যুব্যাধিভয়ং তস্য নাস্তি কিঞ্চিৎ কলৌযুগে।
অপুত্রা লভতে পুত্রং ত্রিপক্ষং শ্রবণং যদি।।
দ্বৌ মাসৌ বন্ধনান্মুক্তি বিপ্রর্বক্ত্রাক্তাৎ শ্রতং যদি ।
মৃতবৎসা জীববৎসা যন্মাসং শ্রবণং যদি।।
নৌকায়াং সঙ্কটে যুদ্ধে পঠনাজ্জয়মাপ্নুয়াৎ।
লিখিত্বা স্থাপয়েদ্ গেহে নাগ্নিচৌরভয়ং ক্কচিৎ।।
রাজস্থানে জয়ী নিত্যং প্রসন্না সর্বদেবতাঃ।
ওঁ হ্রীং ব্রহ্মানী ব্রক্ষ্মলোকে চ বৈকুণ্ঠে সর্বমঙ্গলা।।
ইন্দ্রাণী অমরাবত্যামম্বিকা বরুণালয়ে।
যমালয়ে কালরুপা কুবেরভবনে শুভা।
মহানন্দাগ্নিকোণে চ বায়ব্যাং মৃগবাহিনী।।
নৈঋত্যাং রক্তদন্তাচ ঐশান্যাং শূলধারিনী।
পাতালে বৈষ্ণবীরূপা সিংহলে দেবমোহিনী।
সুরসা চ মণিদ্বীপে লঙ্কায়াং ভদ্রকালিকা।।
রামেশ্বরী সেতুবন্ধে বিমলা পুরুষোত্তম।
বিরজা ঔড্রদেশে চ কামাক্ষ্যা নীলপর্বতে।।
কালিকা বঙ্গদেশে চ অযোধ্যায়াং মহেশ্বরী।
বারাণস্যামন্নপূর্ণা গয়াক্ষেত্রে গয়েশ্বরী।।
কুরুক্ষেত্রে ভদ্রকালী ব্রজে কাত্যায়নী পরা।
দ্বারকায়াং মহামায়া মথুরায়াং মাহেশ্বরী।।
ক্ষুধা ত্বং সর্ব্বভূতানাং বেলা ত্বং সাগরস্য চ।
নবমী শুক্লপক্ষস্য কৃষ্ণাস্যৈকাদশী পরা।।
দক্ষস্য দুহিতা দেবী দক্ষযজ্ঞবিনাশিণী।
রামস্য জানকী ত্বং হি রাবণাধ্বংসকারিণী।।
চন্ডমুন্ডবধে দেবী রক্তবীজবিনাশিনী।
নিশুম্ভশুম্ভমথনী মধুকৈটভঘাতিনী।।
বিষ্ণুভক্তির্প্রদা দুর্গা সুখদা মোক্ষদা সদা।
আদ্যাস্তবমিমং পূণ্যং যঃ পঠেৎ সততং নরঃ।।
সর্ব্বজ্বর ভয়ং ন স্যাৎ সর্ব্বব্যাধিবিনাশনম্।
কোটিতীর্থফলং তস্য লভতে নাত্র সংশয়ঃ।।
জয়া মে চাগ্রতঃ পাতুবিজয়া পাতু পৃষ্ঠতঃ।
নারায়ণী শীর্ষদেশে সর্ব্বাঙ্গে সিংহবাহিনী।।
শিবদূতী উগ্রচন্ডা প্রত্যঙ্গে পরমেশ্বরী।
বিশালাক্ষী মহামায়া কৌমারী শঙ্খিণী শিবা।।
চক্রিণী জয়দাত্রী চ রণমত্তা রণপ্রিয়া।
দুর্গা জয়ন্তী কালী চ ভদ্রকালী মহোদরি।।
নারসিংহী চ বারাহী সিদ্ধিদাত্রী সুখপ্রদা।
ভয়ঙ্করী মহারৌদ্রী মহাভয় বিনাশিণী।।
ইতি ব্রহ্মযামলে ব্রহ্মনারদ সংবাদে
আদ্যাস্তোত্রম্ সমাপ্তম্ ।।
শৃণু বৎস্য প্রবক্ষ্যামি আদ্যাস্তোত্রং মহাফলম্।
যঃ পঠেৎ সততং ভক্ত্যা স এব নিষ্ণুবল্লতঃ।।
মৃত্যুব্যাধিভয়ং তস্য নাস্তি কিঞ্চিৎ কলৌযুগে।
অপুত্রা লভতে পুত্রং ত্রিপক্ষং শ্রবণং যদি।।
দ্বৌ মাসৌ বন্ধনান্মুক্তি বিপ্রর্বক্ত্রাক্তাৎ শ্রতং যদি ।
মৃতবৎসা জীববৎসা যন্মাসং শ্রবণং যদি।।
নৌকায়াং সঙ্কটে যুদ্ধে পঠনাজ্জয়মাপ্নুয়াৎ।
লিখিত্বা স্থাপয়েদ্ গেহে নাগ্নিচৌরভয়ং ক্কচিৎ।।
রাজস্থানে জয়ী নিত্যং প্রসন্না সর্বদেবতাঃ।
ওঁ হ্রীং ব্রহ্মানী ব্রক্ষ্মলোকে চ বৈকুণ্ঠে সর্বমঙ্গলা।।
ইন্দ্রাণী অমরাবত্যামম্বিকা বরুণালয়ে।
যমালয়ে কালরুপা কুবেরভবনে শুভা।
মহানন্দাগ্নিকোণে চ বায়ব্যাং মৃগবাহিনী।।
নৈঋত্যাং রক্তদন্তাচ ঐশান্যাং শূলধারিনী।
পাতালে বৈষ্ণবীরূপা সিংহলে দেবমোহিনী।
সুরসা চ মণিদ্বীপে লঙ্কায়াং ভদ্রকালিকা।।
রামেশ্বরী সেতুবন্ধে বিমলা পুরুষোত্তম।
বিরজা ঔড্রদেশে চ কামাক্ষ্যা নীলপর্বতে।।
কালিকা বঙ্গদেশে চ অযোধ্যায়াং মহেশ্বরী।
বারাণস্যামন্নপূর্ণা গয়াক্ষেত্রে গয়েশ্বরী।।
কুরুক্ষেত্রে ভদ্রকালী ব্রজে কাত্যায়নী পরা।
দ্বারকায়াং মহামায়া মথুরায়াং মাহেশ্বরী।।
ক্ষুধা ত্বং সর্ব্বভূতানাং বেলা ত্বং সাগরস্য চ।
নবমী শুক্লপক্ষস্য কৃষ্ণাস্যৈকাদশী পরা।।
দক্ষস্য দুহিতা দেবী দক্ষযজ্ঞবিনাশিণী।
রামস্য জানকী ত্বং হি রাবণাধ্বংসকারিণী।।
চন্ডমুন্ডবধে দেবী রক্তবীজবিনাশিনী।
নিশুম্ভশুম্ভমথনী মধুকৈটভঘাতিনী।।
বিষ্ণুভক্তির্প্রদা দুর্গা সুখদা মোক্ষদা সদা।
আদ্যাস্তবমিমং পূণ্যং যঃ পঠেৎ সততং নরঃ।।
সর্ব্বজ্বর ভয়ং ন স্যাৎ সর্ব্বব্যাধিবিনাশনম্।
কোটিতীর্থফলং তস্য লভতে নাত্র সংশয়ঃ।।
জয়া মে চাগ্রতঃ পাতুবিজয়া পাতু পৃষ্ঠতঃ।
নারায়ণী শীর্ষদেশে সর্ব্বাঙ্গে সিংহবাহিনী।।
শিবদূতী উগ্রচন্ডা প্রত্যঙ্গে পরমেশ্বরী।
বিশালাক্ষী মহামায়া কৌমারী শঙ্খিণী শিবা।।
চক্রিণী জয়দাত্রী চ রণমত্তা রণপ্রিয়া।
দুর্গা জয়ন্তী কালী চ ভদ্রকালী মহোদরি।।
নারসিংহী চ বারাহী সিদ্ধিদাত্রী সুখপ্রদা।
ভয়ঙ্করী মহারৌদ্রী মহাভয় বিনাশিণী।।
ইতি ব্রহ্মযামলে ব্রহ্মনারদ সংবাদে
আদ্যাস্তোত্রম্ সমাপ্তম্ ।।